আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রা এবং অনিশ্চিত পরিস্থিতির কারণে মানসিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। এর ফলশ্রুতিতে অনেকেই ভুগছেন অ্যাংজাইটি বা মানসিক উদ্বেগজনিত সমস্যা, যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো প্যানিক অ্যাটাক এবং প্যানিক ডিজঅর্ডার। যদিও এ দু’টি সমস্যার মধ্যে বেশ কিছু মিল থাকলেও, এগুলো সম্পূর্ণ আলাদা এবং চিকিৎসার ধরণও ভিন্ন। এই পোস্টে আমরা প্যানিক অ্যাটাক ও প্যানিক ডিজঅর্ডার কীভাবে চিনবেন এবং সেগুলো মোকাবেলা করবেন, তা নিয়ে আলোচনা করবো।
প্যানিক অ্যাটাক কী?
প্যানিক অ্যাটাক হলো এক ধরনের হঠাৎ ভয় বা অস্বস্তি, যা মুহূর্তের মধ্যেই আপনাকে গ্রাস করে। উদাহরণস্বরূপ, হঠাৎ কোনো খারাপ সংবাদ শোনা বা কোনো বিপদ সম্পর্কে জানলে শরীরে শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যেমনঃ বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণগুলো কী?
প্যানিক অ্যাটাকের সময় শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি দেখা দেয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে থাকছেঃ
- দ্রুত হৃদস্পন্দন
- অতিরিক্ত ঘাম
- হাত-পা কাঁপা বা অবশ হয়ে যাওয়া
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- মাথা ঘুরানো বা বমি বমি ভাব
- চারপাশের পরিবেশ অচেনা মনে হওয়া
প্যানিক ডিজঅর্ডার কী?
প্যানিক ডিজঅর্ডার হলো এমন একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে কোনো কারণ ছাড়াই বারবার প্যানিক অ্যাটাক হতে থাকে। একে বলা যেতে পারে ক্রনিক অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে। কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই হঠাৎ ভয় অনুভব করা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
প্যানিক ডিজঅর্ডারের কারণ:
গবেষণায় দেখা গেছে, প্যানিক ডিজঅর্ডারে ভোগা ব্যক্তিদের ব্রেনের অ্যামিগডালা অংশটি অতিরিক্ত সক্রিয় থাকে। এটি ভয় এবং আতঙ্ক প্রসেস করে, যার ফলে কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই তারা আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন।
প্যানিক অ্যাটাক ও ডিজঅর্ডার নির্ণয় ও চিকিৎসা:
প্যানিক অ্যাটাক ও ডিজঅর্ডারের চিকিৎসায় মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT), রিলাক্সেশন টেকনিক, এবং মেডিটেশন অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। অতিরিক্ত গুরুতর অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের ব্যবহারও প্রযোজ্য হতে পারে।
লাইফস্টাইল পরিবর্তন:
প্যানিক অ্যাটাক এবং ডিজঅর্ডার মোকাবেলায় কিছু লাইফস্টাইল পরিবর্তন সাহায্য করতে পারে। যেমনঃ
- নিয়মিত ব্যায়াম
- পর্যাপ্ত ঘুম
- স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিস
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- ক্যাফেইন গ্রহণ কমানো
উপসংহার:
প্যানিক অ্যাটাক ও প্যানিক ডিজঅর্ডার দুইটি ভিন্ন মানসিক সমস্যা হলেও সঠিক চিকিৎসা এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে তা মোকাবেলা করা সম্ভব। প্রতিটি ব্যক্তির সমস্যার ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত সমাধান খুঁজে নিলে তারা সুস্থ থাকতে পারবেন।